চলতি মাসে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন খালেদা জিয়া
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চলতি মাসেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন বলে সূত্রে জানা গেছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ আরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তাঁর স্বাস্থ্যের ক্রমশ অবনতি হওয়ায় পরিবার ও দলীয় নেতৃবৃন্দ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পরিবারের আবেদন ও সরকারের সিদ্ধান্ত
খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সরকারের কাছে একাধিকবার বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটছে, যা দেশের বাইরে বিশেষায়িত চিকিৎসা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত চিকিৎসাসেবার দেশে নেওয়ার জন্য পরিবার এবং বিএনপি দলের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে খালেদা জিয়ার বিদেশ ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে মানবিক বিবেচনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি পর্যালোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও চিকিৎসকদের মতামত
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, তাঁর লিভারের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। লিভার সিরোসিস থেকে শুরু করে কিডনির জটিলতা—সবকিছুই দ্রুতগতিতে অবনতি ঘটছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে আইসিইউতে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরণের গুরুতর শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বিদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালের সহায়তা প্রয়োজন, যেখানে উন্নত প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব হবে।
একজন চিকিৎসক বলেছেন, “খালেদা জিয়ার শরীরের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাঁর নিয়মিত ডায়ালাইসিস এবং অন্যান্য জটিল শারীরিক সমস্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অবনতি ঘটাচ্ছে। দেশে এই ধরনের চিকিৎসা যতটা সম্ভব করা হচ্ছে, তবে তাঁর বাঁচার জন্য বিদেশে উন্নতমানের চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হলে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন মানবিক দিক বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, সরকারি দলের একাংশের মধ্যে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
বিএনপি নেতারা আশা করছেন, সরকার দ্রুত এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে এবং তাঁকে চলতি মাসেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। তারা বলছেন, “খালেদা জিয়া দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, তাঁর জীবন রক্ষার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
শেষ সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা এবং কখন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে, তা নিয়ে এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন তার পরিবার ও সমর্থকরা। চিকিৎসার জন্য জরুরি অনুমতির বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চলতি মাসেই খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার সম্ভাবনা নিয়ে দেশে ও বিদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ ও উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অনুমতি আসার পরই খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পথ খুলে যাবে।